অভ্যাসগত (Habituation)
অভ্যাসগত আচরণ হচ্ছে সরলতম ধরনের শিক্ষণ। এ ধরনের আচরণে কোনো পুরস্কার বা তিরস্কারের (শাস্তির) সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন একটি উদ্দীপনার ঘন ঘন পুনরাবৃত্তির ফলে আচরণগত সাড়াদানে ক্রমশ ভাটা পড়ে যায়, এক সময় প্রাণী ওই উদ্দীপনায় আর কোনো সাড়াই দেয় না। এ আচরণের মাধ্যমে প্রাণী নতুন পরিবেশে ক্রমান্বয়ে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে অভিযোজিত হয়। অভ্যাসগত আচরণে প্রাণী শুধু নতুন উদ্দীপনায় অভ্যন্তই হয় না, বরং কম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দীপনা বর্জনেও উদ্যোগী হয়।
যেমন- একটি পোষা কুকুরের উপস্থিতিতে শব্দ করলে কুকুরটি মাথা উঁচু করে সাড়া দেয়। যদি ঘন ঘন শব্দ সৃষ্টি করা হয় তখন আর তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। এ পরিবর্তন অবসাদগ্রস্ততার কারণে কিংবা সংবেদগ্রাহকগুলোর অভিযোজনের ফলে ঘটে না, বরং অভ্যাসজনিত কারণে ঘটে থাকে। এ সাড়াদান দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, এমনকি সম্পূর্ণ অভ্যস্ত হলে প্রাণীটি ওই উদ্দীপনায় আর কখনওই সাড়া দেবে না। তা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর প্রয়োগ করলেও কাজ হবে না। প্রাণিজগতের তথা জীবজগতের সব গোষ্ঠীতেই, অভ্যাসগত শিক্ষণ আচরণ দেখা যায় । শস্যক্ষেতে আপদ পাখি তাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের সবখানে মাটির হাড়িতে রং মেখে যে ভয়াল চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয় তা দেখে আপদ পাখি কিছুদিন ভয়ে থাকে। পরে চলৎশক্তিহীন গড়নটিকে আর আমলে নেয় না, বরং ফিঙ্গে পাখির বসার জায়গা হয় (পোকা-মাকড় খাওয়ার জন্যে উড়তে সুবিধা হয়)। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও এমন ঘটনা ঘটে। রেলস্টেশনের পাশে অবস্থিত বাসা বাড়ীতে ট্রেনের শব্দে রাত যাপনের কথা অনেকে চিন্তাই করতে পারবে না, কিন্তু কিছুদিন বাস করলে ট্রেনের শব্দ বা হুইসেল কোনোটাই আর ঘুমের ব্যাঘাতের কারণ হবে না। এটাই অভ্যাসগত আচরণ। মাথার উপরে বিরক্তিকর শোঁ শোঁ শব্দে ঘুরতে থাকা ফ্যানের শব্দে আমরা এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বা আলোচনা সভা কোনটিতেই এর প্রভাব পড়ে না। এ আচরণের সমস্ত আদর্শ, বৈশিষ্ট্য ও পুনরুদ্ধার ( recovery) একটি নিউরোন ও নিউরোমাসক্যুলার সংযোগেও প্রদর্শিত হতে পারে।